ইলেকট্রনিক টেক জায়ান্ট অ্যাপল আগামী সপ্তাহে তার প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার সর্বশেষ তুরুপের তাস আইফোন এক্স ২০১৮ বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে এবং নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী আইফোনের এই জনপ্রিয় মডেলটিকে নিয়ে অ্যাপল তাদের এ যাবৎকালের সেরা সময়টি পার করবে। জনপ্রিয় আইফোন ব্র্যান্ডের জন্য পরবর্তী কি কি দেখতে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আপেলের ভক্তদের এক মাসেরও কম সময় অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে।
জোর গুজব ছড়িয়েছে যে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩টি ডিভাইস বাজারে আনার ঘোষণা দিবে, যেগুলো আকারে বড় হলেও পকেটে রাখা যাবে, আবার একই সাথে ব্যবহারকারীদের মানিব্যাগের উপরেও তেমন কোন চাপ ফেলবে না।
নিশ্চিত না হলেও, অ্যাপল আগামী মাসেই একটি আপগ্রেডেড আইফোন এক্স, একটি বড় আইফোন এক্স প্লাস এবং এক্স সিরিজের একটি বাজেট ফোন বাজারে আনার জন্য ব্যবহারকারীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।
এলসিডি স্ক্রিনের শেষোক্ত এই বাজেট ফোনটি মূলত: ব্যবহারকারীদের আইফোন এক্স সিরিজের ফোন ব্যবহারের শখ মিটাবে। মূল্য কমাতে এতে ব্যয়বহুল ফ্ল্যাগশিপ ফোনে পাওয়া বর্তমান OLED স্ক্রিনের পরিবর্তে দেয়া হবে LCD ডিসপ্লে এবং পিছনে রাখা হবে একটি ক্যামেরা।
অন্যান্য নতুন ফিচারগুলোর মধ্যে আরও দ্রুত প্রসেসর, অধিক কার্যকর ফেসিয়াল রিকগনিশন এবং আরও কালারফুল ডিসপ্লে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
এছাড়াও একাধিক রিপোর্ট থেকে পাওয়া খবর থেকে জানা যায়, অ্যাপল অবশেষে ফাস্ট চার্জি সুবিধা এই স্মার্টফোনে সংযুক্ত করতে পারে, যা কয়েক মিনিটের চার্জে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা ও ফোন ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিবে। ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খার প্রতিফলন আইফোন এক্স সিরিজে দেখা পাওয়া যাবে।
আগামী লঞ্চ ইভেন্টে অ্যাপল তাদের ডিভাইসগুলোতে কি কি নতুন ফিচার দিবে, তা নিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন তথ্য পাওয়া যাবে। তবে, এ কথা বলাই যায়, বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অ্যাপল নতুন যা কিছু আনে, তা রেকর্ড করার জন্যই বাজারে আনে।
তবে, এশিয়ান প্রযুক্তি সাইট ডিজিটাইমস’র রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আইফোন এক্স এ ৬.০ থেকে ৬.১ ইঞ্চি OLED স্ক্রিন, এক্স প্লাসে ৬.৪ থেকে ৬.৫ ইঞ্চি OLED স্ক্রিন এবং এক্স এর বাজেট ফোনে ৫.৭ থেকে ৫.৮ ইঞ্চি এলসিডি স্ক্রিন থাকতে পারে। তবে, এলসিডি স্ক্রিনের বাজেট ফোনটাই আশাতীত বিক্রি হবে এবং এর মাধ্যমে অ্যাপল মূল রাজস্ব পেতে যাচ্ছে।
স্ট্যাটিস্টা’র রিপোর্ট হতে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রযুক্তি সংস্থাটি তার আইফোন ব্র্যান্ডের মাধ্যমে এবার সর্বোচ্চ রাজস্ব সংগ্রহ করবে। অ্যাপলের ২০১৮ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকেই (সেপ্টেম্বর ২৯ পর্যন্ত) কোম্পানিটির আইফোন রাজস্বের পরিমাণ ১২৯.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১৫ সালের ৯ মাসের রেকর্ড আয় ১২২.৮ বিলিয়ন ডলারকেও ছাড়িয়ে গেছে।”
নতুন এই ৩টি ডিভাইস লঞ্চের মধ্য দিয়ে অ্যাপল আশা করছে তাদের আয় নতুন আরেকটি রেকর্ডের জন্ম দিবে এবং অ্যাপল প্রতিদ্বন্দ্বি এ্যান্ড্রয়েডের সাথে প্রতিযোগিতায় একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থানে পৌঁছে দিবে।
এর প্রমাণও মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ে। স্যামসাং সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে যে তার Galaxy S9 এর বিক্রি প্রত্যাশিতভাবে হয়নি।
স্যামসাংয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক আয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “হাইএন্ড স্মার্টফোন বাজারে তাদের বিক্রি স্থবির হয়ে গেছে; আইটি ও মোবাইল কমিউনিকেশনস বিভাগের হিসাবে অনুযায়ী তাদের আর্থিক বছর এবং প্রান্তিক সময়, উভয় ক্ষেত্রে আয় হ্রাস পেয়েছে”। ওদিকে, এলটিই নেটওয়ার্ক ব্যবসায় কোম্পানিটি আবার প্রভূত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
যদিও অ্যাপল এর রাজস্ব ভাল হয়েছে, কিন্তু, সম্প্রতি চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানী স্মার্টফোন বিক্রিতে অ্যাপলকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। চীনের বিখ্যাত হুয়াওয়ে তাদের নতুন P20 প্রো স্মার্টফোন বিক্রির মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে অ্যাপলকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। পি২০ ফোনের সাথে ৩টি ক্যামেরার সমন্বয় করে হুয়াওয়ে বাজিমাত করে দিয়েছে।
আইএইচএস মার্কিট এ্যানালিস্ট গ্যারিট শ্নিমান বলেছেন, “হুয়াওয়ে তাদের স্মার্টফোনগুলোতে আরও নতুন নতুন ভ্যালু-এ্যাডেড মডেল বাজারে নিয়ে আসছে, যাতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও ফিচারে ভরপুর হচ্ছে”।
“এই যেমন ধরেন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন Huawei P20 Pro মডেলের কথা, যার সাথে প্রথমবারের মত ৩টি ক্যামেরা রয়েছে। আর এতেই বাজার মাৎ করে দিয়েছে।”
আর, ব্যবহারকারীদের সাথে নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে চীনের স্মার্টফোনের বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে থাকতে হুয়াওয়েকে সাহায্য করেছে।
আরও দেখুন: