চুল থেকে খুশকি পড়া একটি অত্যন্ত বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর একটি সমস্যা। কিন্তু, এ সমস্যার স্বস্তিকর সমাধান হাতের কাছেই রয়েছে। সঠিক ও সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে খুশকি দূর করা সম্ভব।
খুশকি কি?
মাথার লোমকূপে ময়লা জমে ও ছত্রাকের আবির্ভাবের কারণে মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমে যায় এবং শুষ্ক ত্বকের ছোট ছোট মৃত ত্বকের কোষ থেকে খুসকি তৈরী হয়। খুশকি মূলতঃ সমস্যাটা মাথার ত্বকের উপরের অংশে বেশি হয়।
এছাড়া, মুখে এবং কানে এটা দেখা দিতে পারে। এমনকি ঠোটে, নাকের ছিদ্র থেকে শুরু করে কপাল, ভ্রুতেও ইহা দেখা যেতে পারে।
খুশকি অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগ এবং এলার্জি ঘটাতে পারে।
সাধারনত খুশকি একজন মানুষের বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে বা প্রাপ্তবয়স্ক হবার সময় দেখা যায়।
খুশকি কেন হয়?
মাথার ত্বকে নতুন কোষ তৈরি হয় এবং পুরনো কোষগুলো ঝরে যায়। এটা একটা প্রাকৃতিক চক্র। কিন্তু পুরনো কোষগুলো যখন ঠিকঠাক মতো ঝরে যেতে পারে না তখন সেগুলো জমে যায় এবং ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়। ফলে খুশকি হয়।
মাথার ত্বক যদি অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়, যদি চুল নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয় তাহলে সহজেই খুশকি হয়।
এছাড়াও, স্কাল্প বা মাথার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হলেও খুশকি হতে পারে।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
তবে চুল ও মাথার ত্বকের সামান্য যত্ন নিলেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। জেনে নিন খুশকি দূর করার ৭টি উপায়।
- টকদই: খুশকির সমস্যা থেকে বাচঁতে টকদই খুব কার্যকরী। খুশকি দূর করতে টকদই মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ১০ মিনিট রেখে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। খুশকির সমস্যা পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে দু’বার এই ভাবে চুলে টকদই ব্যবহার করা যেতে পারে।
- রিঠা: চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে রিঠার জুরি মেলা ভার। খুশকির সমস্যার সমাধানেও এটি বেশ কার্যকর। রিঠা পাউডার বা রিঠা সিদ্ধ জল চুলের ত্বকে লাগিয়ে ঘণ্টা খানেক রেখে ভালমতো ধুয়ে ফেলুন। এ ভাবে সপ্তাহে দু’বার রিঠা মাথায় মাখলে খুশকির সমস্যায় দ্রুত উপকার পাবেন।
- লেবুর রস: দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস অল্প জলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ২-৫ মিনিট ম্যাসাজ করার পর চুল ধুয়ে নিন। খুশকির সমস্যা পুরোপুরি দূর না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে দু’বার এই ভাবে চুলে লেবু ব্যবহার করা যাবে।
- মেথি: মেথি সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে ভাল করে বেটে নিন। ছেঁকে নেয়া জল ফেলে দেবেন না। এবার বেটে নেয়া মেথি চুলের গোঁড়ায় মাথার ত্বকে ভাল করে লাগিয়ে নিন। ঘণ্টা খানেক রেখে চুল ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার পর মেথি ভিজিয়ে রাখা জল দিয়ে আরও একবার চুল ধুয়ে নিন। এ ভাবে সপ্তাহে দু’বার মেথি-মালিশ করলে উপকার পাওয়া যাবে দ্রুত।
- পেঁয়াজের রস: দুটো পেঁয়াজ ভাল করে বেটে এক মগ জলে মিশিয়ে নিন। মাথায় এই পেঁয়াজের রস ভাল করে লাগিয়ে মালিশ করুন। কিছু ক্ষণ পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ ভাবে সপ্তাহে দু’বার পেঁয়াজের রস মাথায় মাখলে খুশকির সমস্যায় দ্রুত উপকার পাবেন।
- নারকেল তেল: নারকেল তেল খুশকির প্রকোপ কমাতে খুবই কার্যকরী। এ ছাড়া চুলে গোড়া ময়েশ্চারাইজ করে খুশকি এবং স্ক্যাল্প ইনফেকশনের সম্ভাবনাও অনেক কমিয়ে দেয়। সপ্তাহে দু’বার চুলের গোড়ায় সামান্য উষ্ণ নারকেল তেলের মালিশ করলে দ্রুত উপকার পাবেন।
খুশকি দূর করার শ্যাম্পু
মাথায় খুশকির প্রাদুর্ভাব দূর করতে হেড অ্যান্ড শোল্ডার অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু (Anti dandruff Head and Shoulders Shampoo) অনেকের ক্ষেত্রে কাজে দিতে পারে।
এছাড়াও, খুশকি ধরণ অনুসারে শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে কিটোকোনাজল শ্যাম্পু (Ketoconazole Shampoo) ব্যবহার করা যেতে পারে। এই শ্যাম্পুটা ফার্মেসীতে পাওয়া যায়।
এছাড়াও যা করা উচিত
- পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সব কটি পুষ্টি উপাদানই রাখুন আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়।
- দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।
- সব সময় পরিষ্কার চিরুনি ব্যবহার করুন।
- কখনোই অন্যের চিরুনি ব্যবহার করবেন না।
- চুলে বা মাথার ত্বকে ময়লা জমতে দেওয়া যাবে না একদমই।
- কিছু চর্মরোগ সাধারণভাবে দেখতে খুশকির মতো হয়। তাই মাথায় খুশকির পরিমাণ বেশি হলে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হোন।
পরিশেষে
চুল সবসময় পরিস্কার রাখুন। অপরিস্কার চুলে খুশকি হবে এবং বৃদ্ধি পাবে এর কোনো বিকল্প নেই।
কাজেই প্রতিদিনই আপনার চুল পরিস্কার করে ধুয়ে ফেলবেন। ধীরে ধীরে আপনার চুল থেকে হারিয়ে যাবে খুশকি।