ইউরি আলেক্সেইভিচ্ গ্যাগারিন (Yuri Alekseyevich Gagarin) (৯ মার্চ ১৯৩৪ – ২৭ মার্চ ১৯৬৮) একজন সোভিয়েত বৈমানিক এবং নভোচারী। তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি মহাকাশ ভ্রমণ করেন, তিনি ভস্টক নভোযানে করে ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল, পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন। ১৯৬৮ সালের ২৭শে মার্চ একটি বিমান দুর্ঘটনায় গাগারিনের জীবনাবসান ঘটে৷
মহাকাশে উড়াল

১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল একটি ভস্টক-১ রকেটে চড়ে ইউরি গ্যাগারিন কক্ষপথে পৌঁছান ও পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ মহাশূন্যে তিনিই ছিলেন প্রথম মানব৷ পেশায় ফাউন্ড্রি ইঞ্জিনিয়ার গ্যাগারিন যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন৷ মহাকাশযাত্রার জন্য তাঁকে নির্বাচন করা হয়৷ মহাকাশযাত্রার সাত বছর পরে, ১৯৬৮ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে একটি মহড়া চলার সময় তাঁর মিগ-১৫ জঙ্গিজেট ভূপাতিত হওয়ায় প্রাণ হারান গ্যাগারিন৷
বেলকা আর স্ট্রেলকা (Belka and Strelka)

গ্যাগারিনের আগে যে আর কোনো জীব মহাকাশযাত্রা করেনি, এমন নয়৷ বেলকা আর স্ট্রেলকা নামের দু’টি কুকুর ও সেই সঙ্গে একটি খরগোশ, ৪০টি নেংটি ইঁদুর ও দু’টি ধেড়ে ইঁদুর মহাকাশে ঘুরে আসে ১৯৬০ সালের ১৯শে আগস্ট তারিখে৷ জীবজগতের এই প্রতিনিধিরা একটি স্পুটনিক-৫ স্যাটেলাইটে চেপে মহাকাশযাত্রা করে ও ল্যান্ডিং ক্যাপসুলের মাধ্যমে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে৷
মহাকাশের প্রথম সেলিব্রিটি

ভূপৃষ্ঠে ফেরার পর স্বভাবতই গ্যাগারিন একজন সেলিব্রিটি হয়ে ওঠেন ও সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির দূত হিসেবে সারা বিশ্বে যাত্রা করেন৷ পেশাগতভাবে তাঁর ভবিষ্যৎ নভোচারীদের প্রশিক্ষণ দেবার কথা ছিল, কিন্তু গ্যাগারিন যুদ্ধবিমানের বৈমানিক হিসেবে তাঁর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করতে চেয়েছিলেন৷ এভাবেই একটি ট্রেনিং ফ্লাইটে সম্ভবত কোনো ঝুঁকিপূর্ণ মহড়া নেবার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে গ্যাগারিন প্রাণ হারান৷
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
[adinserter block=”1″]

শীতল যুদ্ধ চলা সত্ত্বেও গ্যাগারিন পূর্ব ও পশ্চিমে সমান খ্যাতি ও স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ অপরদিকে তাঁর সাফল্য মার্কিনিদের মহাকাশ কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার প্রেরণা জুগিয়েছে৷ হান্ট্সভিল টাইমস পত্রিকার এই সংস্করণে জার্মান-মার্কিন রকেট বিজ্ঞানী ভ্যার্নহের ফন ব্রাউন যুক্তরাষ্ট্রকে সোভিয়েত রকেট কর্মসূচির তুলনায় পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছেন৷
গাগারিনের এক বছর পর জন গ্লেন

১৯৬২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি একটি মার্কারি-অ্যাটলাস-৬ রকেট প্রথম মার্কিন নভশ্চর জন গ্লেনকে মহাকাশে নিয়ে যায়৷ গ্লেন তিনবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ গ্লেন গ্যাগারিনের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ বিমানচালক ছিলেন: ইতিপূর্বেই তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে ফাইটার পাইলট ও টেস্ট পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ও তাঁর আমলের সুপারসোনিক ফ্লাইটের রেকর্ডটি ভঙ্গ করেছিলেন৷
মহাকাশে প্রথম মহিলা

গ্যাগারিনের দু’বছর পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম মহিলা নভোচারীকে মহাকাশে প্রেরণ করে৷ ভ্যালেন্তিনা তেরেশ্কোভা একটি ভস্টক-৬ রকেটে মোট তিন দিন কাটান ও ৪৮ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ ছবিতে তাঁকে তাঁর দুই নভোচারী সতীর্থ গ্যাগারিন ও বাইকোভস্কির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷ তেরেশ্কোভা আজ অবধি একজন সেলিব্রিটি৷ সোচিতে ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অলিম্পিক পতাকা বহণ করেন ভ্যালেন্তিনা তেরেশ্কোভা৷
চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখলেন আর্মস্ট্রং ও অ্যাল্ড্রিন

মহাকাশযাত্রা প্রতিযোগিতায় অবশেষে মার্কিনদিরই জয় ঘটে, যখন ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই তারিখে নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অ্যাল্ড্রিন চন্দ্রপৃষ্ঠে পদার্পণ করেন৷ আজ অবধি মার্কিনিরা বা নাসা ছাড়া আর কোনো দেশ বা সংস্থা চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারেনি৷ তার পরের চার দশকে চাঁদ যেন বড় কাছের গন্তব্য হয়ে পড়েছে, নজর গেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস ও দূর-দূরান্তের গ্রহ-তারকা ও নক্ষত্রপুঞ্জ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার দিকে৷
কিংবদন্তির গ্যাগারিন

পূর্ব ইউরোপের মানুষদের কাছে গ্যাগারিনের স্মৃতি জাগরূক থাকে, কেননা সোভিয়েত রাশিয়া সাবেক পূর্ব জার্মানি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি লৌহ যবনিকার অভ্যন্তরের সমাজতন্ত্রী বন্ধুদেশগুলির নভোচারীদের মহাকাশযাত্রার সুযোগ করে দেয়৷
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

পূর্ব-পশ্চিম মুখোমুখি দ্বন্দ্বের অবসানের পর মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়৷ আশির দশকের শেষে সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিমি নভোচারীদের ‘মির’ মহাকাশ কেন্দ্রটি পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র বা আইএসএস প্রকল্পে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপের ইসএ, ক্যানাডা ও জাপান সংশ্লিষ্ট।
চন্দ্রপৃষ্ঠে এক উজ্জ্বল, যৌথ ভবিষ্যৎ?

আগামীতে মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়বে বৈ কমবে না – আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে সেই সহযোগিতা? আমরা কি আবার চাঁদে ফিরব? আইএসএস-এর পরিবর্তে কি চাঁদের গায়েই গজিয়ে উঠবে এ ধরনের একটি ‘মুন ভিলেজ’?