তিসির বীজ (Flax seeds) আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। এই বীজ গুড়া করে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে খেলে অনেক রোগের ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়। তিসি হচ্ছে আঁশসমৃদ্ধ, প্রোটিন, ক্যলসিয়াম, এন্টি অক্সিডেন্টস, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং মিনারেলের একটি অসাধারণ সমন্বয়। তিসি আমাদের শরীরে এন্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে দেহকে শক্তিশালী রাখে এবং সহজে ক্লান্ত হতে দেয় না।
তিসি বীজে থাকা প্রতিটি উপাদান কমবেশি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদের ছোটখাটো যেকোনো রোগের পাশাপাশি কঠিন অনেক রোগ হবার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। আমাদের শারীরিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এটি আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য ও অনেক ভালো কাজ করে। এর গুনাগুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না তাইতো এই তিসি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া উচিত।
তিসির বীজ খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়
হজম ক্ষমতা বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
তিসির বীজ ডায়েটরি ফাইবার সমৃদ্ধ। এটিতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় দুই ধরনের ফাইবার রয়েছে। দ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের টক্সিন বের করতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে এই বীজ হজমক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তিসির বীজ খুব কার্যকরী। ফ্ল্যাকসিডে অদ্রবণীয় ফাইবারগুলি লিগন্যান দিয়ে তৈরি যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে
তিসির বীজ অ্যামিনো অ্যাসিড, আর্জিনাইন এবং গ্লুটামাইন দ্বারা সমৃদ্ধ। এসব উপাদান হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে। তিসি বীজ রক্তচাপ কমায়, খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, ধমনীতে কোনও বস্তু জমা হওয়া রোধ করে। এ কারণে এই বীজ পরোক্ষভাবে স্ট্রোক বা হৃদরোগও প্রতিরোধ করে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কম করে
তিসির বীজে লিগন্যান থাকায় এটি কোলন, প্রসটেট, স্তনের ক্যানসার রোধ করে। এর অ্যান্টি অ্যাঞ্জিওজেনিক উপাদান শরীরে টিউমার হতে বাধা দেয়।
স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ভালো
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তিসির বীজ স্নায়ুর জন্য উপকারী। এটি স্নায়ু ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।
চুল ও ত্বক সুন্দর রাখে
তিসির বীজের জেল ত্বক এবং চুলের জন্য দারুণ উপকারী। এটি ফ্লেকি বা খসখসে এবং রুক্ষ ত্বকের উপর খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত তিসি খেলে বা তেল লাগালে ত্বক নরম হয়। শুষ্ক স্কাল্প আর্দ্রও করে এই বীজ।
ওজন কম করতে যে ভাবে তিসি সাহায্য করে
তিসির বীজে উপস্থিত ডায়েটারি ফাইবার ওজন কম করতে সাহায্য করে। তিসির বীজে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত ৩০ গ্রাম ফাইবার খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরানো যায়। এ ছাড়াও উচ্চ ফাইবার যুক্ত ফ্যাট শুধুমাত্র যে ওজন কম করে তা-ই নয়, বরং টাইপ ২ ডায়বিটিজ ও হৃদরোগের ঝুঁকিকেও কম করতে পারে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ফাইবার ও শরীরের মেদের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ অধিক ফাইবার যুক্ত খাবার-দাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ওজন কম করার সমস্ত কার্যকরী উপায়ের মধ্যে অন্যতম হল তিসির বীজের ব্যবহার। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ গলাতে সাহায্য করতে পারে। দ্রুত ওজন কম করতে চাইলে নিয়মিত তিসির বীজ খেতে হবে। এর সাহায্যে ১০ দিনে ৫ কেজি ওজন কম করতে পারবেন। তিসির বীজে উপস্থিত ঔষধীয় গুণ কী ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে জেনে নিন।
কতটুকু তিসির বীজ প্রতিদিন খাওয়া উচিৎ
গবেষকদের মতে প্রতিদিন ৫ টেবিল চামচ (৫০ গ্রাম) এর কম তিসির বীজ খাওয়া উচিৎ।
তিসি খাওয়ার নিয়ম
তিসিকে খাওয়ার জন্য একে ভেজে নিয়ে পাউডার তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে বা সকালের নাস্তার সঙ্গে খেতে হবে। তবে রাতে খেলে কার্যকারিতা বেশি পাবেন। প্রতিদিন ছোট চামচের এক চামচ তিসিই যথেষ্ট স্বাস্থ্যের জন্য। বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া বা গেস্ট্রিক হতে পারে।
সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় বা যেসব মায়েরা তার সন্তানদের বুকের দুধ পান করাচ্ছেন তাদের এই বীজ খাওয়া উচিত নয়।
যাদের অলরেডি হাই ব্লাড প্রেসার এবং ক্যান্সার রয়েছে তারা এই বীজ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
কোনো একটি রোগের জন্য যদি অলরেডি মেডিসিন সেবনরত হয়ে থাকেন তাহলে এই বীজ খাওয়া হতে বিরত থাকুন।
পরিশেষ
প্রাকৃতিক নানা উপাদানসমূহের যতই গুনাগুন থাকুক না কেনো তার সঠিক উপকার পেতে হলে বা আপনি আদৌ এই উপাদানটি গ্রহণ করতে পারবেন কিনা তা অবশ্যই কোনো চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। এর পাশাপাশি এটি গ্রহণ করার নিয়মাবলি সম্পর্কে অবগত হতে হবে।