হযরত আলি (রা.) ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা। তিনি ৬০০ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় কুরাইশ বংশের বিখ্যাত হাশেমি গোত্রে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর ডাকনাম ছিল আবু তোরাব ও আবুল হাসান। পিতার নাম আবু তালিব। মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ। তিনি নবীজী (সা.) এর চাচাত ভাই।
হযরত আলি (রা.) এর ইসলাম গ্রহণ
হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর চাচা আবু তালিবের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তাই, শিশু বয়স হতেই আলী (রা.) হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সঙ্গে থাকতেন। হযরত আলী (রা.) এর বয়স যখন দশ বছর তখন নবীজী নবুয়ত লাভ করেন। তিনি হযরত খাদিজা (রা.) ও নবীজীকে নামায পড়তে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি করছেন? উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন, ‘এটা আল্লাহর দ্বীন’। হযরত খাদিজা (রা.) বললেন, ‘তোমাকেও আমরা সেই দায়িত্ব দিচ্ছি’। তখনই তিনি ইসলামের প্রতি উদ্বুদ্ধ হন এবং কালেমা পাঠ করে মুসলমান হন। হযরত আলি (রা.) ছিলেন সর্বপ্রথম যুবক যিনি কম বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইসলামের জন্য হযরত আলি( রা.) এর অবদান
ইসলাম কবুল করেই তিনি ধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্টায় আত্মোৎসর্গ করেন। অর্থ দিয়ে না হলেও তিনি জ্ঞান ও সাহসের সাহায্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বর্বভ কুরাইশদের আমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। হযরত আলি (রা.) দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) কে সর্বদা সাহায্য করতেন। নবীজী (সা.) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন, তখন রাসূল (সা।) এর শয্যায় শুয়ে থেকে তিনি যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন তা বড়ই বিস্ময়কর।
আলী (রা.) এর বীরত্ব
হযরত আলী (রা.) ছিলেন শক্তিশালী ও সাহসী যোদ্ধা। তাঁর তেজস্বিতা, অসীম সাহস ও শৌর্য-বীর্য সর্ব্জনবিদিত ছিল। বিধর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিটি অভিযানে তিনি অংশ নেন। বদর যুদ্ধের সময় তিনি অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। তাই, নবীজী তাঁকে তাঁর ‘জুলফিকার’ তরবারি প্রদান করেন।
আলী (রা.) এর বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যে সন্তুষ্ট হয়ে নবীজী তাঁকে ‘আসাদুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর সিংহ‘ উপাধিতে ভূষিত করেন। মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর পতাকা আলী (রা.) এর হাতে শোভা পাচ্ছিল।
খলিফা নির্বাচন
হযরত আলী (রা.) হযরত আবু বকর ও উমর (রা.) এর শাসনামলে মন্ত্রী ও উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। উসমান (রা.) এর শাসনামলে তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন। হযরত উসমান (রা.) ইন্তেকাল করলে হিজরি ৩৫ সনে তিনি খেলাফত লাভ করেন। প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ তিনি খেলাফতের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেন।
অনাড়ম্বর জীবন
শিশু বয়স হতেই হযরত আলী (রা.) ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধে। তিনি জাঁকজমক পছন্দ করতেন না। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি খাবার জোগাতেন। খলিফা হবার পরও তিনি নিজ হাতে অন্যের কাজ করে সংসার খরচ জুগিয়েছেন।
তিনি খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটাতেন। অহঙ্কার বলতে কোনো কিছুই তাঁর মধ্যে ছিল না। তিনি ধনী দরিদ্র সবার সাথে মিলেমিশে চলতেন। তিনি ছিলেন অগাধ জ্ঞানের অধিকারী। তাই, নবীজী (সা.) বলেছেন,
‘আমি জ্ঞানের ভাণ্ডার আর আলী তার দরজা’।
আলী (রা.) ছিলেন একাধারে কবি, বৈয়াকরণ, সাহিত্যিক ও ন্যায় শাস্ত্রবিদ। কুরআন, হাদিস, দর্শন, আইনশাস্ত্র প্রভৃতিতে তিনি প্রগাঢ় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি ৫৮৬ টি হাদিস বর্ণনা করেন।
শাহাদাতবরণ
হিজরি ৪০ সনের ১৮ রমযান শুক্রবার ফযর নামাযে যাবার পথে হযরত আলী (রা.) আবদুর রময়ান বিন মুলজিম নামক খারেজি ঘাতকের তলোয়ারের আঘাতে জখম হন। তিনদিন পর তিনি শাহাদাতবরণ করেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র হাসান তাঁর জানাজার নামাযে ইমামতি করেন। কুফার জামে মসজিদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।