বাড়ি থেকে বেরোতেই যাব; অথচ, ফোনে চার্জ পর্যাপ্ত দেয়া হল না; এমনটা প্রায়শই আমাদের হয়ে থাকে। হাতে পনেরো মিনিট মত সময় নিয়ে চার্জ দিয়েও দেখা যায় মাত্র দুই পার্সেন্ট চার্জ বাড়লো। ভবিষ্যতে এমন বিড়ম্বনা এড়াতে করণীয় কী, তা জানতে পড়ে ফেলুন নীচের আর্টিকেলটি।
ব্যাটারি লাইফ কত দীর্ঘ হবে, তা অনেকগুলো প্রভাবকের ওপর নির্ভরশীল। তাই, মাত্র একটি উপায়ে সমাধান মেলে না। আপনি যদি স্মার্টফোন ব্যবহারে একটু কৌশলী হন, সঠিক ইকুপমেন্ট দিয়ে ব্যাটারী নিয়ে আপনার এক রাশ হতাশা থেকে আপনি বাঁচতে পারবেন। আসুন উপায়গুলো জেনে নিই।
সূচীপত্র
সেটের সাথে মিলিয়ে প্লাগ এবং চার্জার কিনুন
এ্যান্ড্রয়েড চার্জারগুলোয় ইউনিভার্সাল ফিটিঙের সুবিধা থাকলেও সব চার্জার একরকম নয়। দ্রুত চার্জ দেয়ার জন্য ল্যাপটপ থেকে চার্জ দেয়া মোটেই ভালো কিছু নয়। একটি ইউএসবি ২.০ পোর্ট থেকে মাত্র ২.৫ ওয়াট পাওয়ার আসে। এদিকে, ইউএসবি ৩.০ পোর্ট দেয় ৪.৫ ওয়াট। আপনার ওয়াল চার্জার এর চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক দ্রুত ফোন চার্জ করতে সহায়তা করবে।
মার্কেটের নতুন স্মার্টফোনগুলো ফাস্ট চার্জিঙের সুবিধা দিচ্ছে, যাতে একবারেই ১৫-১৮ ওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হতে পারে। কোয়ালকম ওয়েবসাইটে এমন ফাস্টচার্জিঙ ফোনগুলোর একটি তালিকা রয়েছে। এজন্যে, আপনার কোয়ালকম প্রসেসর থাকার বাধ্যবাধকতা নেই; কেবল কোয়ালকম এর পাওয়া সিস্টেম থাকলেই চলবে।
লক্ষণীয় যে, আপনার ফোন ফাস্ট চার্জিঙের সুবিধা দিলেও আপনার ফোনের সাথে আসা চার্জারটি হয়ত ফাস্ট চার্জার বা সবচেয়ে কার্যকরী চার্জার নাও হতে পারে। হয়ত, আপনাকে নিজস্ব চার্জার কিনেও নিতে হতে পারে। উদাহরণসরূপ, এলজি জি-সিক্সের স্টক চার্জার (LG G6 Stock Charger) হিসেবে দেয়া হয় এলজি জি-ফাইভের (LG G5) সেই একই কুইক চার্জ ২.০ (Quick Charger 2.0)। অথচ, উভয় ফোনই কুইক চার্জ ৩.০ (Quick Charge 3.0) সাপোর্ট করে!

ফোনের ব্র্যান্ডের সাথে মিল রেখেই চার্জার নিতে হবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। একটি থার্ড পার্টি চার্জারেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে। তবে, বেনামী সস্তা চার্জার থেকে সাবধান! ওগুলো ব্যবহারে যে কোনো সময় আগুন ধরে যাবার মত দূর্ঘটনা ঘটতেও পারে।
তাড়াহুড়োর সময়ে ওয়ারলেস চার্জিং এড়িয়ে চলাই ভালো। চিরাচরিত তারের মাধ্যমে চার্জ দেয়ার চেয়ে তারবিহীন চার্জিঙে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে। এক্ষেত্রে ওয়ারলেস কুইক চার্জার একটি ভিন্ন বিষয়। এটি ইউএসবি চার্জিঙের তুলনায় দ্রুততর আর ওয়াল সকেট থেকে কেবল চার্জিঙের চেয়ে ধীর গতির।
চার্জিঙের সময় এয়ারপ্লেন মোড (Airplane mode) চালু করুন
চার্জিঙের সময় ফোন যত কম কাজে ব্যস্ত থাকবে, তত দ্রুত চার্জ হবে। এয়ারপ্লেন মোড চালু থাকাকালীন সকল ওয়ারলেস রেডিও সিগন্যাল ব্লক হয়ে থাকায় ফোনে অতিরিক্ত কোনো কিছুই প্রসেস হয় না; ফোনও নির্বিঘ্নে চার্জ হতে পারে।
এমতাবস্থায় ফোনে কল বা মেসেজ না পৌঁছালেও আপনার ফোন পরবর্তী কয়েক ঘন্টা চালু থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চার্জটুকু নিতে পারবে।

ফোন বন্ধ রেখে চার্জ দিন
ফোন পুরোপুরিভাবে বন্ধ রেখে চার্জে দিলে এয়ারপ্লেন মোডের চেয়েও দ্রুততার সাথে ফোন চার্জ নেবে। আবারও বলে রাখা ভালো, এতে জরুরি কিছু বার্তা ছুটে যেতে পারে। তবুও, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে, যেইটুকু চার্জ দিতে পারবেন তাতেও অনেকটা উপকার পেতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সবগুলো মোবাইল অপারেটরের অফলাইন কল ও এসএমএস এলার্ট সার্ভিস রয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ফোন বন্ধ থাকলেও কোন ধরণের সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোন বিড়ম্বনা নেই।
ব্যাটারি সেভিং মোড ব্যবহার করুন
এ্যান্ড্রয়েড ললিপপ ভার্সন থেকেই এই সুবিধাটির সাথে আমাদের পরিচয়। সাধারণত, সেটিং থেকে এটি খুঁজে পাওয়া যায় (Settings > Battery > Battery Saver)। আবার, কিছু ফোনে এটি ম্যানুফ্যাক্চারার স্পেসিফিক বা ডেভেলপার অপশনেও থাকে। চার্জে দেবার সময় এই মোড চালু করে নেবেন।

লক্ষণীয় যে, এই মোডে ফোনের ডাটা কানেকশন ফোরজি বা থ্রিজি থেকে টুজিতে নেমে আসে। তাই, আবার মোডটি অফ করার পর ম্যানুয়ালি ডাটা সেটিংস ঠিক করে নিতে হতে পারে অথবা মিনিট দেড়েক অপেক্ষা করতে হতে পারে।
অপ্রয়োজনীয় ফিচারগুলো বন্ধ রাখুন
চার্জিঙের সময় ব্লু-টুথ, জিপিএস, ওয়াইফাই বা এনএফসি চালু আছে কিনা দেখে নিন। এগুলোও ব্যাটারির পাওয়ার ব্যবহার করে। সব এ্যাপ্লিকেশন বন্ধ রাখুন। এসময়ে সবরকম অটোমেটিক ব্যাকআপ বা এ্যাপ আপডেট নেয়া থেকে ফোনকে বিরত রাখবেন।

পড়ার মত আরও আছেঃ স্মার্টফোনের চার্জ ধরে রাখার কিছু নিয়ম
বারবারে ফোন ধরতে যাবেন না
হয়ত কোনো সম্ভাব্য ফোন কল বা নোটিফিকেশনের আশায় এয়ারপ্লেন মোডে থাকা যাচ্ছে না। এমন হলে, বারবার ডিসপ্লে অন করার লোভ সংবরণ করে থাকবেন। কেননা, ফোনের স্ক্রিনটাই সবচেয়ে বড় ব্যাটারী ক্ষয়কারী। স্ক্রিন যতক্ষণ সচল ততই দ্রুত ব্যাটারী শেষ হবে। তাই, ফাস্ট চার্জিঙের স্বার্থেই আপনাকে এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।
ফোনকে শীতল রাখার চেষ্টা করুন
ফোনের ব্যাটারিকে কখনোই বেশি গরম হতে দেয়া উচিত নয়। তার মানে এই না যে, আপনার ফোনকে চার্জিঙের সময়ে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখতে বলা হচ্ছে! তবুও, প্রচন্ড ঠান্ডার চেয়ে ফোন গরম হয়ে যাওয়াটা অধিক ক্ষতিকর।
আপনার ফোনকে সবসময় রুমের শীতল কোনো স্থানে রেখে চার্জে দেবার অভ্যাস করুন। গাড়ির ভেতরে বা সরাসরি রোদ পড়ে এমন স্থানে ফোন চার্জে দেবেন না। নিজের হাতে বা পকেটে রেখেও ফোন চার্জ দেবেন না।

এ সময়ে ফোনের রেডিয়েশনের মাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। ফোনকে অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারলে আপনি নিঃসন্দেহে দ্রুততর সময়ে ফোনকে চার্জ দিয়ে নিতে পারবেন।
পোর্টেবল ইউএসবি চার্জার সাথে রাখুন
এটি আসলে ফোনকে দ্রুত চার্জ করবে না। তবে, কম চার্জ থাকা ফোন যে কোন যায়গায় চার্জ দেবার জন্য উপকারে আসবে। তাই, হাল্কা ও সহজে বহনযোগ্য আকারের এটি পোর্টেবল ইউএসবি চার্জার ২০০০ টাকার চেয়েও কম মূল্যে কিনে নিতে পারেন।

পকেটে বহনযোগ্য এমন এটি পোর্টেবল ইউএসবি চার্জার সাথে থাকলে শেষ সময়ের তাড়াহুড়োয় সামান্য এটু চার্জ দিয়েই দৌড় দেবার সমস্যা থেকেও আপনি থাকতে পারবেন নির্ঝঞ্ঝাটে।
সূত্রঃ AndroidPIT