দূর্মূল্যের বাজারে ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনা একটি দারুন আইডিয়া হতে পারে। আপনি প্রকৃত খরচের একটি ভগ্নাংশে একটি সম্পূর্ণ কার্যকরী কম্পিউটার পাবেন। কিন্তু একটি ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনায় ঝুঁকি রয়েছে, এবং একটি নতুন গাড়ি কেনার মতো, বিভিন্ন পরীক্ষা এবং সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সেকেন্ডহ্যান্ড ল্যাপটপ কেনার বিষয়ে আপনার যা জানা দরকার, তা এখানে আপনার সুবিধার জন্য তুলে ধরা হল।
১. বিক্রেতা সম্পর্কে অনলাইন রিভিউগুলো চেক করে দেখুন
যে দোকান থেকে ব্যবহৃত ল্যাপটপ কিনতে যাচ্ছেন, তাদের সম্পর্কে সোস্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক গ্রুপগুলো থেকে বিক্রেতা সম্পর্কে পজেটিভ-নেগেটিভ রিভিউগুলো খোঁজ করে দেখুন। সবাই তার পণ্য সম্পর্কে চটকদার বিজ্ঞাপন দিবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে বিক্রেতা সম্পর্কে ক্রেতাদের আন-কাট রিভিউ পোস্টগুলো লক্ষ্য করেন দেখুন। এগুলো থেকে অনেকখানি ধারণা পেয়ে যাবেন।
২. ল্যাপটপের বডি পরীক্ষা করে দেখুন
আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে ল্যাপটপটি পরীক্ষা করতে পান, তাহলে পুঙ্খানুপুঙ্খ ল্যাপটপের বডি পরীক্ষা করা অপরিহার্য। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, ল্যাপটপের ফ্রেম ফাটল দেখা যায় কিনা। এছাড়াও, কোন স্ক্রু না থাকা, আলগা কব্জা এবং অন্য কোন অনিয়ম আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
ল্যাপটপটি ভালোভাবে কাজ করলেও, যদি মনে হয় যে এটি অযত্নে-অবহেলায় ব্যবহৃত হয়েছে এবং একটিকে অনেকবার (বা একেবারেই) ফেলে দিয়েছে, তাহলে আপনি জানেন না এর কী ধরনের অভ্যন্তরীণ ক্ষতি হয়েছে কিনা, যা এর আয়ু কমিয়ে দিতে পারে।
৩. ডিসপ্লেতে ডেড পিক্সেলের উপস্থিতি চেক করুন
দ্বিতীয় যে বিষয়ে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করব, তা হল, ল্যাপটপের ডিসপ্লে। আসলে, এটিই হল ল্যাপটপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এটি কেনার আগে আপনাকে যা করতে হবে, তা হল কয়েক মিনিটের জন্য এটি চালু করুন এবং তারপরে ডিসপ্লের দিকে মনোযোগ দিয়ে দেখুন। ডেড পিক্সেলগুলো একবারে বেশ স্পষ্ট বোঝা যায়।
ডেড পিক্সেল সহজেই সনাক্ত করা যায়। যখনই আপনি স্ক্রিনে একটি ছোট কালো বিন্দু দেখতে পাবেন, তখন ধরে নিবেন না যে, এটি একটি ধূলিকণা। বরং, আপনার মনিটরটি বন্ধ করুন এবং এটি একটি ভেজা কাপড় দিয়ে মুছুন। যদি স্পটটি সেখানে থাকে, তবে এটি একটি ডেড পিক্সেল হতে পারে।
৪. কীবোর্ড এবং ট্র্যাকপ্যাড পরীক্ষা করুন
কীবোর্ড এবং ট্র্যাকপ্যাড কম্পিউটারের সর্বাধিক ব্যবহৃত অংশ, তাই উভয় অংশই সন্তোষজনকভাবে কাজ করছে তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভাঙা কীগুলির জন্য পরীক্ষা করুন। কিগুলো চাপ দিয়ে ঠিকঠাক মত বর্ণ লেখা হচ্ছে কিনা। আবার দেখুন আপনি কীবোর্ড দিয়ে টাইপ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন কিনা।
ট্র্যাকপ্যাড দ্বারা কোন জেসচার (gesture) সমর্থিত তা পরীক্ষা করুন এবং সেগুলি ব্যবহার করে দেখুন (যেমন পিঞ্চ-টু-জুম, দুই-আঙুলের স্ক্রোল, তিন-আঙুলের সোয়াইপ ইত্যাদি)। মাউস কী উপস্থিত থাকলে, নিশ্চিত করুন যে সেগুলি দিয়ে সহজে চাপ দেয়া যায়, ইত্যাদি।
৫. পোর্ট এবং সিডি/ডিভিডি ড্রাইভ পরীক্ষা করুন
সমস্ত USB পোর্ট, হেডফোন জ্যাক, ইথারনেট পোর্ট, HDMI, SD কার্ড স্লট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ইনপুটগুলি ব্যবহার করে দেখুন৷ এর মধ্যে অনেকগুলি সরাসরি মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা প্রতিস্থাপন করা ব্যয়বহুল। যদিও সিডি/ডিভিডি অপ্রচলিত, অনেক পুরানো ল্যাপটপ এখনও একটি সিডি/ডিভিডি ড্রাইভের সাথে আসে। এটি কার্যকরী কিনা তাও পরীক্ষা করুন।
৬. ওয়্যারলেস সংযোগ পরীক্ষা করুন
কেউ এমন ল্যাপটপ চায় না যা Wi-Fi এর সাথে সংযোগ করতে পারে না। তাই নিশ্চিত করুন যে, আপনি ঝামেলা ছাড়াই Wi-Fi নেটওয়ার্ক দেখতে এবং সংযোগ করতে পারেন৷ ব্লুটুথ কীভাবে কাজ করে তা দেখতেও পরীক্ষা করুন।
৭. ওয়েবক্যাম এবং স্পিকার পরীক্ষা করুন
বেশিরভাগ ল্যাপটপ ওয়েবক্যাম পুরোনো ধাচের হয়ে থাকে। তবুও, অকার্যকর বা একেবারে ওয়েবক্যাম না থাকার চেয়ে পুরোনো ধাচের ওয়েবক্যাম থাকা ভাল।
আমি সন্দেহ করি যে অনেক লোক তাদের ল্যাপটপ স্পিকার বেশি ব্যবহার করে না, তবে এটি কতটা জোরে হতে পারে এবং শব্দগুলি সহজেই বিকৃত (distort) হয় কিনা, তা ভাল করে দেখে নিন।
৮. ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন

পুরোনো ল্যাপটপের ব্যাটারি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবুও, ব্যাটারি কতটা চার্জ ধরে রাখতে পারে এবং ব্যাটারির স্বাস্থ্যের অবস্থা দেখতে ইনস্টল করা OS-এর পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সেটিংসে গিয়ে আপনি ব্যাটারি কতক্ষণ স্থায়ী হয় তার মোটামুটি ধারণা পেতে পারেন।
এছাড়াও, নিশ্চিত করুন যে ব্যাটারি সঠিকভাবে চার্জ হয় এবং খুব দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে না যায়। অন্যথায়, দোকানীকে ক্রুটিপূর্ণ ব্যাটারীর জন্য দামে ছাড় দেয়ার জন্য বলুন, যাতে আপনি একটি রিপ্লেসমেন্ট ব্যাটারী কিনে নিয়ে পারেন।
৯. CPU, GPU, RAM এবং ডিস্ক পারফরম্যান্স পরীক্ষা
আমরা সবাই মাল্টিটাস্কিং এবং একসাথে একাধিক জিনিসে কাজ করার পছন্দ করি। মাল্টিটাস্কিং এ CPU, GPU, RAM এবং ডিস্ককে একই সাথে সমানতালে কাজ করতে হয়। আপনার সিস্টেমকে সত্যিই ধীর করে দেয় তা দুটি প্রধান কারণের উপর নির্ভর করে: RAM মেমরির ক্ষমতা এবং ডিস্ক ক্যাশে/ডিস্ক স্টোরেজ স্পেস। তাই একটি ব্যবহৃত বা সংস্কার করা কম্পিউটার কেনার আগে কিছু মৌলিক মাল্টিটাস্কিং করে পরীক্ষা করে দেখুন।
পারফরম্যান্স সমান কিনা তা পরীক্ষা করতে, প্রায় দশ মিনিটের জন্য ল্যাপটপটি ব্যবহার করুন। একাধিক ব্রাউজার উইন্ডো এবং সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন খোলার চেষ্টা করুন এবং মাল্টিটাস্ক করার চেষ্টা করুন এবং তাদের মধ্যে টগল করুন।
যদি ল্যাপটপটি বুট হতে প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় নেয়, তবে এটিকে মাল্টিটাস্কিং এর জন্য উপযোগী নয় বলে ধরে নিতে পারি।
যদি ল্যাপটপের সাথে পুরোনো, ধীর গতির HDD থাকে, তবে এটিকে একটি SSD (Solid State Drive) কেনার মাধ্যমে আপনি যেকোনো ল্যাপটপ বা কম্পিউটারকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন।
অন্যদিকে, যদি বিক্রেতা দাবি করেন যে ল্যাপটপে একটি SSD ইনস্টল করা আছে, তাহলে আপনি একটি বিনামূল্যের তৃতীয় পক্ষের সফ্টওয়্যার ইনস্টল করে এবং একটি ডায়াগনস্টিক চালানোর মাধ্যমে SSD-এর স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতা স্থিতি পরীক্ষা করতে চাইতে পারেন৷
১০. ব্যবহৃত ল্যাপটপে যে ধরণের স্পেসিফিকেশনের খোঁজ করবেন
বর্তমানে বাজারে প্রচুর শক্তিশালী ল্যাপটপ রয়েছে এবং এমনকি মৌলিক, প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যারের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় স্পেসিফিকেশন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই আপনার সংস্কার করা বা ব্যবহার করা ল্যাপটপ আপনার প্রয়োজনীয় সব কাজ পরিচালনা করতে পারে তা নিশ্চিত করতে, এই ন্যূনতম স্পেসিফিকেশন সহ একটি মেশিন সন্ধান করতে ভুলবেন না:
- 8 গিগাবাইট RAM বা তার বেশি
- 3rd Gen AMD Ryzen প্রসেসর বা অন্তত একটি 8th Gen Intel
- ন্যূনতম রেজোলিউশন কমপক্ষে 1920×1080 পিক্সেল
- এসএসডি
পরিশেষে
একটি ব্যবহৃত ল্যাপটপ ক্রয় করা কঠিন নয়। উপরে যে সব সাধারণ চেকগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা অনুসরণ করে আপনি সম্ভবত এমন একটি ল্যাপটপ কিনতে পারবেন, যা আপনাকে দীর্ঘ দিন আপনার ক্যারিয়ারে ইতিবাচক প্রভাব রেখে যাবে।