পৃথিবীতে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে কমলার (Orange) কদর অনেক। কমলার আকর্ষণীয় রঙ ও গন্ধও এর জনপ্রিয়তার একটি কারণ হলেও মূলতঃ পুষ্টিগুণের কারণে কমলার এত জনপ্রিয়তা। রসালো পাকা কমলার কামড় দেবার পর এর তীব্র সুগন্ধ মুহূর্তেই আমাদের প্রাণের মধ্যে থাকা “লাইক” বাটনে চাপ পড়ে যায়।
কমলার আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ভিটামিন-সি’তে ভরপুর কমলার রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা শরীরকে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এবার আমি কমলা নিয়ে কিছু কথা বলেই বিদায় নিব।
ভিটামিনে ভরপুর কমলালেবু মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ দেহের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। কমলায় রয়েছে শরীরের জন্য আরও উপকারী গুণাগুণ।
শীতকালে বাজারে প্রচুর কমলা পাওয়া যায়। কিন্তু সুস্বাধু এই ফলের গুরুত্ব না বুঝে আমরা অনেকেই এটি খাই না। ভিটামিন ‘সি’তে ঠাসা এই ফল রোজ খাওয়া উচিত। এখন শীত-গ্রীষ্ম ১২ মাস কমলা পাওয়া যায়।
যারা ঠাণ্ডা-সর্দিতে ভোগেন তাদের জন্য প্রধান দাওয়াই এই ফল। রোগ প্রতিরোধে কমলার চেয়ে কার্যকর ফল খুবই কম আছে।
কমলা ফলের সাথে পরিচিতি
কমলা ফলের উপরিভাগে রয়েছে কমলা (orange) রঙের উজ্জ্বল রঙ। পরিপক্কতার উপর নির্ভর করে এটি সবুজ থেকে কমলা বর্ণ ধারণ করতে পারে। কমলা বৈজ্ঞানিক নাম হল, “Citrus X Sinensis”। কমলা খোসা খুব সহজেই ছাড়িয়ে নেয়া যায়। খোসা ছাড়ানোর সময় থেকেই এর সুগন্ধ মৌ মৌ করে ছড়াতে থাকে। সাধারণতঃ একটি পরিপুষ্ট কমলায় ১০-১২ টা কোয়া থাকে। প্রতিটি কোয়ায় ২/৩টি বীজ (বিচি) থাকতে পারে। সাধারণতঃ কমলার খোসার স্বাদ তিতা বা টক হয়ে থাকে থাকে, তবে, এর বীজ সবসময়ই তিতা স্বাদের হয় এবং এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভাল।
কমলার বিভিন্ন ধরণ
পৃথিবীতে সাধারণতঃ ৫ ধরণের কমলা দেখতে পাওয়া যায়ঃ

নাভেল কমলা (Navel Orange): কমলা উপরের দিকে মাঝের অংশটি “নাভি”র মত দেখতে হওয়ায় এদের এমন নামকরণ করা হয়েছে। বাজারে দোকানগুলোতে সাধারণতঃ এমন ধরণের কমলা বেশি দেখা যায়।

ব্লাড কমলা (Blood Orange): এদের খোসা বেশ পুরু হয়। আর, কাটলে ভিতরের রক্তের মত লাল রঙের পাল্প দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোর স্বাদ মিষ্টি বা টক হতে পারে। সাধারণতঃ ডেজার্টে ব্যবহার করা হয়।

মানডারিন কমলা (Mandarin Orange): এই ধরণের কমলার খোসা পাতলা হয়। অন্যান্য কমলা থেকে এদের এসিডের মাত্রা বেশ কম হয়ে থাকে।

ট্যাংগারিন কমলা (Tangerine Orange): এই ধরণের কমলাগুলো মিষ্টি মানডারিন কমলা থেকে আকার অপেক্ষাকৃত বড় হয় এবং বেশ টক স্বাদযুক্ত। এদের খোসা সহজে ছাড়ানো যায়, খেতেও বেশ নরম।

ক্লিমেনটিন কমলা (Clementine Orange): এই ধরণের কমলাগুলো বীজবিহীন এবং আকারে ছোট। এদের চামড়া পাতলা ও উজ্জ্বল এবং ছোট শিশুরা এই কমলা খেতে পছন্দ করে।
কমলার নিউট্রিশন ফ্যাক্ট
নীচের তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখে নিই ১০০ গ্রাম কমলায় যে সব পুষ্টিগুণ রয়েছেঃ
ক্যালরী | ৪৭ |
কার্বোহাইড্রেট | ১২ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.১ গ্রাম |
ডায়েটারি ফাইবার | ২.৪ গ্রাম |
চিনি | ৯ গ্রাম |
ভিটামিন “এ” | ৪% |
ভিটামিন “সি” | ৮৮% |
ক্যালসিয়াম | ৪% |
ভিটামিন বি৬ | ৫% |
ম্যাগনেশিয়াম | ২% |
যেসব কারণে প্রচুর কমলা খাবেন
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কমলা। রোজ কমলা খেলে ছোটখাটো রোগবালাই এমনকি বড় রোগও ঘেঁষবে না ধারেকাছে।
- কমলায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ত্বকের বলিরেখা দূর করে তারুণ্য ধরে রাখে বহু বছর।
- আমাদের শরীরে মাঝে মাঝে ভিটামিন ‘সি’র ঘাটতি দেখা দেয়। শরীর হয়ে পড়ে নির্জীব। কমলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। ত্বকের সজীবতা ও শরীরে প্রাণশক্তি এবং কর্মস্পৃহা ধরে রাখতে কমলা খান প্রতিদিন।
- কমলায় ভিটামিন ‘সি’র পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন বি-৬ ও ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
- ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় কমলা।
- অনেকে চোখের সমস্যায় ভোগেন। কমলায় রয়েছে ভিটামিন ‘এ’। এই ভিটামিন শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
- কমলায় রয়েছে প্রচুর আঁশজাতীয় উপাদান, যা ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
Photo by Angelo Moleele on Unsplash