আপনার ইন্টারনেট কি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ধীর গতিতে চলছে? File Explorer এর লিস্টে কি এমন কোন সন্দেহজনজ ডিভাইসের নাম দেখতে পাচ্ছেন, বা আপনি কি আপনার টিভিতে মিডিয়া কাস্ট করছেন? আপনি যদি সন্দেহ করেন যে, কোনও প্রতিবেশী আপনার Wi-Fi রিসোর্স চুরি করছে, এই টিউটোরিয়াল দেখে আপনি এই সমস্যাগুলো বের করতে ও তা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারবেন।
“আচ্ছা, কেউ কি আমার ইন্টারনেটে Netflix দেখছে,” আপনি হয়ত মনে মনে বলছেন, বিরক্ত হচ্ছেন, আর মাথা হাত বুলাচ্ছেন। কেউই তার ইন্টারনেট স্পীড অন্য কারও সাথে শেয়ার করতে রাজি না। সাধারণত: ওয়াই-ফাই’র দূর্বল পাসওয়ার্ডের কারণে নেটের অ্যাক্সেস হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। আপনার নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে যাওয়ার অর্থ হল, ঐ ব্যক্তি নেটওয়ার্কের সবগুলো পিসি’র নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে। এটা কি বিপজ্জনক ব্যাপার না। তারা আপনার অজান্তে শেয়ার করা ফাইলগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে, তারা আপনাকে ম্যালওয়্যার দ্বারা সংক্রমিত করতে পারে এবং কিছু পরিস্থিতিতে তারা আপনার অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে৷
এ কারণে, আপনার নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আপনার নেটওয়ার্কের যত্ন নেওয়া উচিত। আজকে একটি ফ্রি ইউটিলিটি অ্যাপ নিয়ে কথা বলব যেটি ব্যবহার করে আপনি আপনার Wi-Fi-এর সাথে কানেক্টেড সবকিছু দেখতে সাহায্য করবে৷
আপনার নেটওয়ার্কে কি অবাঞ্ছিত কেউ কানেক্টেড হয়েছে?

উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা Wireless Network Watcher নামে একটি বিনামূল্যের, পোর্টেবল প্রোগ্রাম ডাউনলোড করতে পারেন (এই পেজে গিয়ে নীচের দিকে Download Wireless Network Watcher (In Zip file) লেখা একটা লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন)। এই ইউটিলিটি অ্যাপ দিয়ে বর্তমানে আপনার নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসের একটি তালিকা প্রদান করবে, যাতে আপনি সন্দেহজনক বা আগে দেখেন নাই, এমন কিছু সনাক্ত করতে পারেন।
Wireless Network Watcher ব্যবহার করতে, প্রোগ্রামটি চালু করুন। এটি অবিলম্বে আপনার নেটওয়ার্ক স্ক্যান করা শুরু করবে। এতে এক বা দুই মিনিট সময় লাগবে – নিচের বাম কোণে “Scanning…” লেখা থাকলে আপনি জানতে পারবেন এটি কাজ করছে। এটি হয়ে গেলে, সেই বার্তাটি অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং আপনাকে সংযুক্ত ডিভাইসগুলির একটি সম্পূর্ণ তালিকা উপস্থাপন করা হবে৷

ছবির তালিকাটি কিছুটা রহস্যময় দেখাতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি টেকি (tech-savvy) না হন। তবে চিন্তা করবেন না। আপনি এখন থেকে IP অ্যাড্রেস এবং MAC অ্যাড্রেস তালিকা উপেক্ষা করতে পারেন। Wireless Network Watcher থেকে কেবল Device Name এবং Network Adapter Company‘র কলামগুলিতে থাকা লেখাগুলো ভালভাবে খেয়াল করুন৷
উদাহরণস্বরূপ, Wireless Network Watcher এ “Dulce” নামে একটি আইটেম দেখতে পাচ্ছি, যা আমার অন্য একটি ল্যাপটপের নাম। আমি নাম ছাড়াই আরেকটি আইটেম দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার প্রস্তুতকারক হিসেবে “Philips Lighting BV” এর নামে দেখছি। এটি সম্ভবত আমার Philips Hue Bridge’র হাব। আপনি যে কোন একটি ডিভাইসে ডাবল-ক্লিক করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট “User Text” যোগ করতে পারেন, যা আপনাকে প্রতিটি ডিভাইস সনাক্ত করতে এবং এই তালিকার সমস্ত আইটেমকে সনাক্ত করতে সহায়তা করবে।
ম্যাক ব্যবহারকারীদের জন্য খুব ভালমানে অ্যাপ আমার চোখে পড়ে নাই। LanScan একটি উল্লেখযোগ্য অ্যাপ, যদিও সম্পূর্ণ ফাংশনালিটির জন্য আপনাকে ৬ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। বেশিরভাগ অন্যান্য অ্যাপগুলি হয় ব্যয়বহুল, বা সেগুলো খাজনার চেয়ে বাজনা হয়ে যায়। আপনি যদি Mac এর ব্যবহারকারী হয়ে থাকে, তাহলে আপনার রাউটারের সেটিংস পেজে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। অথবা, আপনার যদি আইফোন ব্যবহারকারী হয়ে থাকে, আপনি Fing চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক চেক করার পাশাপাশি আপনার পিসি’র অন্য কোন সমস্যার কারণে ইন্টারনেটের ধীর গতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা হলে উইন্ডোজ পিসি’র গতি বাড়ানোর কিছু টিপসের ব্যাপারে আপনি আগ্রহী হতে পারে।
রাউটার সেটিং চেক করে দেখা

আপনি যদি ভাগ্যবান হন, আপনি রাউটারের তালিকার সমস্ত আইটেমকে চিনতে পারবেন। কিন্তু, লিস্টে এমন কিছু হয়ত পেয়ে যেতে পারে, যাদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নাও থাকতে পারে।
রাউটারের ম্যানেজমেন্ট পেজে যাওয়ার জন্য, আপনি আপনার ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে তার IP অ্যাড্রেস টাইপ করে Enter key চাপ দিন। সেখানে একবার, Attached Devices বা Client List এর মত লিংক খুঁজে বের করুন। এটি আপনাকে Wireless Network Watcher এর অনুরূপ তালিকার মত একটা তালিকা দেখাবে, তবে তথ্য সামান্য ভিন্ন হতে পারে। উভয়ের মধ্যে অজানা ডিভাইসগুলিকে ক্রস-রেফারেন্স করার পরে, আমি দেখতে পেলাম যে তাদের মধ্যে একটি আমার রাউটারের ইন্টারফেসে “AzureWave Technology, Inc” হিসাবে তালিকাভুক্ত ছিল, কিন্তু Wireless Network Watcher নয়। একটু গুগলিং করে যা বুঝতে পারলাম তা হলে এটা আমার ঘরের আরেক ডিভাইস যেটি আমার নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়েছিল। যা হোক, এখন আমি নিশ্চিত যে, এই ডিভাইসটি অবাঞ্ছিত কেউ না, আমি একে নেটওয়ার্কে যুক্ত করেছিলাম।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, আপনি আপনার নেটওয়ার্কের প্রতিটি ডিভাইস আলাদা আলাদা করে সনাক্ত করতে সক্ষম হবেন। যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে এবং আপনি নিশ্চিত হন যে সেটিং আপনার internet-connected ডিভাইস নয়, তবে সেটি আপনার Wi-Fi এ অনুপ্রবেশকারী ছাড়া আর কেউ না।
নেটওয়ার্কে সিকিউরিটি বৃদ্ধি করা

প্রতিবেশীদের মধ্যে থেকে কেউ যদি আপনার Wi-Fi নেটওয়ার্কের ব্যান্ডওয়াডথ চুরি করছে – এমন কিছু বের করার পর তার সাথে মারামারি লাগিয়ে দিবেন?! না, তার প্রয়োজন নাই। তাকে ঝেটিয়ে বিদায় করার “পিস অব মাইন্ড” উপায় আছে। আপনার রাউটারের নিরাপত্তা বাড়িয়ে নিন।
আপনার রাউটারের ওয়েব ইন্টারফেসে লগ-অইন করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিন (সাধারণত Security নামের কোন ট্যাবের অধীনে)। বর্তমানে কোন পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে থাললে, তাড়াতাড়ি একটা শক্তিশালী ও জটিল পাসওয়ার্ড সেট করা উচিত। Wi-Fi রাউটারের পাসওয়ার্ড সেট না করা হলে, হ্যাকারের কাছে আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে সময় লাগবে না। আর, এর সাথে আপনার নেটওয়ার্কের সব পিসি, ল্যাটপট, ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে তার হাতে। পাসওয়ার্ড সেট করার সময় WPA2 পাসওয়ার্ড সিলেক্ট করবেন। কারণ, এই WPA2 এর এনক্রিপশন সিস্টেম সেকেলে WEP এর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।
যদি WPS চালু করা থাকে, তবে এটি বন্ধ রাখুন। কারণ, এটি চালু থাকলে আপনার Wi-Fi পাসওয়ার্ড হ্যাক করা সহজ হবে। আর, বাসায় আসা গেস্টদের জন্য Wi-Fi কানেকশন দেয়ার সময় এমনভাবে রাউটার কনফিগার করুন যাতে গেস্টরা আপনার নেটওয়ার্কে অন্যান্য ডিভাইসগুলো সম্পর্কে কোন তথ্য না দেখতে পায়, অথবা, ওয়ারলেসের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে পারেন।
পরিশেষে
Wi-Fi রাউটারের পাসওয়ার্ড সেট করার সময় বেশ জটিল পাসওয়ার্ড দেয়া খুব ভাল একটা সিকিউরিটি অভ্যাস। এতে হ্যাকারদের জন্য নেটওয়ার্কে প্রবেশ কঠিন হবে। আপনি যদি সন্দেহ হয় যে, নেটের স্পীড কম পাচ্ছেন, তা হলে দেরি না করে Wi-Fi রাউটারের পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করে নিন। ভাল করা, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার পর, আপনার সকল ইন্টারনেট-কানেকটেড ডিভাইসগুলোকে আবার পরিবর্তিত নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ-ইন করে নিতে ভুলবেন না। নচেৎ, ঐ ডিভাইসগুলো আপনার নেটওয়ার্ককে আর অ্যাক্সেস করতে পারবে না।
আর, এভাবে আপনার Wi-Fi নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হতে পারবেন, তেমনি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে নেটওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।