নতুন স্মার্টফোন কিনতে গেলে আমরা সাধারণতঃ মোবাইল ফোনের কি কি বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে কিনে থাকি? আমরা সাধারণতঃ চেক করে দেখি – এই ফোনের ফ্রন্ট ও সেলফি ক্যামেরা দিয়ে কত সুন্দর ছবি তোলা যায়, এর প্রসেসরের স্পীড কেমন, র্যাম ও স্টোরেজ কত, ইত্যাদি। কারণ, এই ধরণের কাজগুলোই সাধারণ স্মার্টফোনগুলোতে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
স্মার্ট বা ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোতে সাধারণতঃ হাই-রেজুলেশনের ক্যামেরা থাকে; আর এ থেকে পাওয়া ছবিগুলোর ফাইল সাইজও অনেক বড় থাকে যেগুলো সাধারণতঃ Whatsapp বা ফেসবুকে শেয়ার দিলে যারা ছবিগুলো ঐ সকল এ্যাপ দিয়ে দেখেন, তাদের প্রচুর ব্যান্ডওয়াডথ নষ্ট করে ফেলে।
এছাড়াও, অল্প কিছু দিনের মধ্যে ফোনের বিল্ট-ইন মেমোরি ছবি দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র ও সবচেয়ে ভাল উপায় হল – এই ছবিগুলোর ফাইল ছোট করে নিয়ে আনা।
সুখবর হল, বর্তমানে এমন সব ইমেজ রিসাইজিং এ্যাপ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর সাহায্যে আমরা আমাদের ছবিগুলোর কোয়ালিটি নষ্ট না করেই ছবি রিসাইজ করতে পারি। এই লেখাতে আমরা এমন কয়েকটি দারুণ ফিচারসমৃদ্ধ এ্যাপ নিয়ে আলোচনা করব যার সাহায্যে ছবির ফাইলকে কম্প্রেস বা রিসাইজ করা ছাড়াও ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট যুক্ত করা, প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করার সুবিধা রয়েছে।

সূচীপত্র
১। ফটো কম্প্রেস ২.০ (Photo Compress 2.0)
- ফ্রি, প্রো ভার্সন ০.৯৯ ইউ.এস. ডলার
- এ্যান্ড্রয়েড ৩.২ বা এর চেয়ে বেশী ভার্সন
- এটি ব্যাচ ধরে অর্থাৎ এক সাথে অনেকগুলো ছবি রিসাইজ করতে পারে
- লিংকঃ Photo Compress 2.0
Photo Compress 2.0 এ্যাপটি তার ইউজারদেরকে ইমেজগুলোকে রিসাইজ করার সময় তিনটি কম্প্রেশন লেভেল অপশন হিসাবে দিয়ে থাকেঃ হাই (high), মিডিয়াম (medium) or লো (low)। ইউজারকে কম্প্রেশন করা নতুন ফাইল পেতে হলে যেটা করতে হবে, কম্প্রেশন লেভেল সিলেক্ট করবেন এবং কম্প্রেশ (compress) বাটনে চাপ দিবেন। এত্তো সোজা! মজার ব্যাপার হল, নতুন যে কম্প্রেস করা ইমেজ পাওয়া যাবে তাতে ইমেজের কোয়ালিটির কোন ক্ষতি হবে না। ইউজার ফ্রেন্ডলি এই এ্যাপের মাধ্যমে ইউজারগণ ব্যাচে (batch) খুব সহজেই ইমেজ রিসাইজ, ক্রপ এবং কম্প্রেস করতে পারবেন।
কিন্তু, Photo Compress 2.0 এ্যাপটির প্রো ভার্সনের অনেক নতুন অপশন রয়েছে; যেমন ব্যবহারকারী ইচ্ছা করলে ছবির EXIF ডাটা ছবির সাথে সংরক্ষণ করতে পারবেন। আরও সুখবর হল, প্রো ভার্সনে কোন ধরণের বিরক্তিকর এ্যাড দেখায় না এবং ব্যবহারকারী তার সে সব ইমেজকে কনভার্ট করবেন সেগুলো এ্যাপের মধ্যে থেকেও সোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করা ব্যবস্থা রয়েছে। যারা মাঝে মাঝে ভ্রমনে বের হন, তারা তাদের ছবিগুলো এমনভাবে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা টুইটারের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।
এ্যাপটির অসুবিধাজনক দিক হল, ফ্রি ভার্সনে একবারে ১০টির বেশি ছবি রিসাইজ করা যায় না। সুতরাং, সকল সুবিধা নেবার জন্য এই এ্যাপটি কিনে নেবার চিন্তা করতে পারেন।

২। রিডিউস ফটো সাইজ (Reduce Photo Size)
- ফ্রি
- এ্যান্ড্রয়েড ৩.০ এর উপরের ভার্সনের সাথে কাজ করে
- একটি করে ছবি রিসাইজ করার যায়
- লিংকঃ Reduce Photo Size
ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে চাচ্ছেন, কিন্তু ছবির সাইজ বড় হওয়ার কারণে শেয়ার করতে পারছেন না; তাহলে আপনার জন্য সমাধান হল, “Reduce Photo Size” নামের এ্যাপটি আপনার স্মার্টফোনে ইন্সটল করে নিন।
এই এ্যাপ ব্যবহার করে ব্যনহারকারী তাদের পছন্দের ছবিগুলোর সাইজ ছোট করে নিতে পারবেন; একই সাথে মডিফাইড ফাইলগুলোকে তার পছন্দের সোশ্যাল শেয়ারিং সাইটে শেয়ার করতে পারবেন বা ইমেইল করেও পাঠাতে পারবেন। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, এ্যাপটি কিন্তু ফাইল কম্প্রেস করে না, শুধু মাত্র ইমেজকে ছোট করে সেভ করে – এতে ইমেজের কোয়ালিটি নষ্ট হয় না, কিন্তু ছোট সাইজের জন্য মোবাইলের মেমোরী কম লাগে।
ইমেজ ছোট করা ছাড়াও ইমেজকে ক্রপ ও রোটেটও (crop and rotate) করা যায়। Reduce Photo Size এ্যাপটি ডাউনলোড করে ফ্রি ব্যবহার করা যায়, কিন্তু, ফ্রি ভার্সনে বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে।

৩। ফটো এন্ড পিকচার রিসাইজার (Photo & Picture Resizer)
- ফ্রি (ইন-এ্যাপ সুবিধা ক্রয়)
- এক সাথে অনেক ইমেজ প্রসেস করার সুবিধা
- এ্যান্ড্রয়েড ৩.০ এর উপরের ভার্সনের সাথে কাজ করে
- লিংকঃ Photo Picture Resizer
এবার বেশ ফাস্ট এবং সহজে ব্যবহার করা যায় এমন একটি ইমেজ রিসাইজিং এ্যাপের কথা বলব। “Photo & Picture Resizer” এ্যাপ’র প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এটি দিয়ে ইমেজ রিসাইজ করা হলে ইমেজের কোয়ালিটির কোনরূপ হেরফের হয় না। রিসাইজ করা ছবিগুলোকে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইমেইল, এমনকি এম.এম.এস এর মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন।
সকল এ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য এই এ্যাপটি একেবারে ফ্রি ব্যবহারযোগ্য; আর, বাড়তি সুবিধার জন্য এ্যাপের মধ্য থেকে এ্যাড-অন ক্রয় করা যায়। কি সুবিধা রয়েছে এই এ্যাড-অন ক্রয়ের মধ্যে? এর সুবিধার মধ্যে রয়েছে, রিসাইজিং প্রসেস আরও তাড়াতাড়ি ও আরও ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেসের মাধ্যমে দ্রুত প্রসেস করতে পারবেন।
আর, রিসাইজ করা ইমেজগুলো ডিভাইসের একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডারে অটোমেটিক্যালি সেভ হয়ে থাকবে; ব্যবহারকারীকে আলাদাভাবে লোকেশন দেখাতে হবে না। এর ইউনিক ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইমেজের কাস্টম রেজুলেশন সেট করা, সাবজেক্টের জেসচার অনুযায়ী ছবি ব্রাউজ করা এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ারিং করা, ইতাদি সুবিধাসমূহ।

৪। পিক্সালর এক্সপ্রেস ফর এন্ড্রয়েড (Pixlr Express for Android)
- ফ্রি
- এক বারে একটি ইমেজ প্রসেস করে
- এ্যান্ড্রয়েড ৩.০ এর উপরের ভার্সনের সাথে কাজ করে
- লিংকঃ Pixlr Express for Android
এ্যান্ডয়েড ইউজারদের জন্য ইমেজ এডিটিং এর জনপ্রিয় এ্যাপগুলোর মধ্যে একটি হল এই পিক্সালর এক্সপ্রেস (Pixlr Express)। এতে বেশ কিছু চোখ ধাঁধানো ফিচার, ইফেক্ট এবং ইউটিলিটি সুবিধা রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে ইউজাররা তাদের ফটোগ্রাফকে ইউনিকভাবে রিটাচ করে নিতে পারবেন। এই এ্যাপে রয়েছে ইন্টারএ্যাকটিভ ইউজার ইন্টারফেস (Interactive UI); এটি চালানো এত সহজ যে, যারা নতুন ফোন কিনেছেন তারাও অতি সহজে এই এ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন।
এ্যাপটি ফিচারসমূহ শুধু এডিটিং এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর সাহায্যে ব্যবহারকারীগণ ইমেজকে ক্রপ, রোটেট এবং রিসাইজও করে নিতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও, এই এ্যাপের দেয়া হয়েছে এ্যাডভান্সড কিছু এডিটিং ফিচার। এগুলো দ্বারা ইমেজের রেড-আই এফেক্ট (red-eye effect), ফটো কালার (photo color), ব্রাইটনেট (brightness) এবং কন্ট্রাস্ট (contrast) লেভেল ঠিক করে নেয়ার সুবিধা রয়েছে।
এ কথা শুনে ব্যবহারকারীগণ খুশী হবেন যে, Pixlr Express এ্যাপে ৬০০ ইফেক্ট দেয়া হয়েছে যেগুলো তাদের ইমেজগুলোর উপরে নিজেদের ইচ্ছামাফিক প্রয়োগ করতে পারবেন। এভাবে ছবিকে বেশ সহজে দারুণভাবে ইফেক্ট দিয়ে পরিবর্তন করে বন্ধুবান্ধবকে দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেয়া যাবে সহজেই।
তাই এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, Pixlr Express ব্যবহার করে ব্যবহারকারীগণ তাদের ছোট হ্যান্ডসেটের মধ্যে পেয়ে যাবেন ফটো এডিটিং এর যাবতীয় সুবিধাসমূহ।

৫। ইমেজ সাইজ – ফটো রিসাইজার (Image Size – Photo Resizer)
- ফ্রি (ইন-এ্যাপ সুবিধা ক্রয়)
- একটি ইমেজ প্রসেস করে সেভ, ইমেইল, প্রিন্ট ও শেয়ার করার সুবিধা
- এ্যান্ড্রয়েড ৩.০ এর উপরের ভার্সনের সাথে কাজ করে
- লিংকঃ Image Size – Photo Resizer
Image Size App এ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীগন খুব তাড়াতাড়ি ও সহজে তাদের ইমেজগুলোকে রিসাইজ করে নিতে পারবেন। এতে রয়েছে আউটপুট ফরম্যাটের সাইজিং একক নির্ধারণের সুবিধা অর্থাৎ inch, centimeter, millimeter বা pixel একক – যেটি সুবিধা সেটি নির্ধারণ করে নিতে পারবেন। আর, রিসাইজ হয়ে যাবার পরে পরিবর্তিত ইমেজকে মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখা, এমেইল বা প্রিন্ট করার সুবিধা – এছাড়াও নতুন ইমেজকে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা যাবে।

৬। রিসাইজ মি (Resize Me)
- ফ্রি
- একটি ইমেজ প্রসেস করে সেভ, ইমেইল, ও শেয়ার করার সুবিধা
- এ্যান্ড্রয়েড ৩.০ এর উপরের ভার্সনের সাথে কাজ করে
- লিংকঃ Resize Me
Resize Me এ্যাপটির সুবিধা হল, এটিকে ব্যবহারকারী তার ইমেজের সাইজ অনুযায়ী প্রয়োজন মত খুব দ্রুত কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। একটা ক্লিকেই এটা করা যায়। এত এ্যাপের ভিড়ে এই এ্যাপের বিশেষত্ব কি? এ্যাপটি ব্যবহার করে, ব্যবহারকারী খুব সহজে ইমেজকে ক্রপ ও রোটেট করতে পারবেন; রিসাইজ করা ইমেজকে ওয়ালপেপার (wallpaper) হিসাবে সেট করে নিতে পারবেন। আপনি কি ছবি আপনার পছন্দমত watermark বসাতে চান? সেটাও সম্ভব। এই সুবিধার জন্য আপনি এই এ্যাপকে একটা ট্রিট দিতেই পারেন, কারণ Resize Me এ্যাপের ফ্রি ভার্সনেই ওয়াটারমার্ক সেট করার সুবিধা রয়েছে।

৭। ইমেজ শ্রিংক লাইট – ব্যাচ রিসাইজ (Image Shrink Lite – Batch Resize)
- ফ্রি
- ব্যাচে একাধিক ইমেজ প্রসেস করে। GPS, EXIF ডাটা সেভের সুবিধা
- এ্যান্ড্রয়েড ৩.০ এর উপরের ভার্সনের সাথে কাজ করে
- লিংকঃ Image Shrink Lite – Batch Resize
আপনি কি চাচ্ছেন যে, আপনার ইচ্ছামত লম্বা ও চওড়া সেট করে ইমেজকে রিসাইজ করে নিবেন? তাহলে সম্ভবতঃ “Image Shrink Lite – Batch Resize” এ্যাপটিই আপনার জন্য বেস্ট চয়েস হবে। রিসাইজ করার সময় আপনি ইচ্ছা করেলে ছবিতে থাকা GPS data, EXIF tags এবং ছবিতে থাকা অন্যান্য তথ্য যেমন, কখন ছবিটি তোলা হয়েছে, ডিভাইসের নাম, ইত্যাদি এডিটেড ছবির সাথে রাখতে বা মুছে দিতে পারেন।
পরিশেষে
উপরে যে সমস্ত এ্যাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তার সবগুলোতে বেশ কিছু চমৎকার ফিচার রয়েছে এবং বিভিন্ন এ্যান্ড্রয়েড সেটে এই এ্যাপগুলো বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যায়। আপনার যে ধরণের ফোন সেটই থাক না কেন সেটিতে আপনার বড় সাইজের সকল ইমেজকে অতি সহজেই এডিট করে নিতে পারবেন এবং কাজ শেষে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে বন্ধু-বান্ধবদেরকে তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন। এই এ্যাপগুলোর কোন কোনটিতে বেশ চমৎকার ফিচার থাকলেও ফ্রি ভার্সনগুলোতে বিরক্তিকর অনলাইন বিজ্ঞাপন দেখার ঝামেলা পোহাতে হবে।
এই লেখাটি পড়ে আপনার স্মার্টফোনের জন্য কোন ইমেজ প্রসেসিং এ্যাপটি ব্যবহার করতে চান তা সম্ভবত ইতোমধ্যেই ঠিক করে নিতে পেরেছেন।