পবিত্র কোরআনের সুরা ”ক্বাহাফ” এ ইয়াজুজ-মাজুজ ও জুলকারনাইন বাদশাহর কথা উল্লেখ আছে। ইয়াজুজ-মাজুজ ছিল এক অত্যাচারী আদম জাতি। সব ধরনের বর্বরোচিত কাজ তারা করত। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল তখনকার সম্প্রদায়। এমতাবস্থায়, জুলকারনাইন যে ছিলেন এক সাহসী বাদশাহ,তিনি এক প্রাচীরের সাহায্যে, এই অত্যাচারী জাতিকে বন্দি করে রাখেন।ঈশা (আ:) এই পৃথিবীতে পুনরায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত “ইয়াজুজ-মাজুজ ” বন্দি থাকবে। এখন আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সেই প্রাচীর কোথায়? আর কেনই বা আমরা সেই প্রাচীর এত অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট থাকা সত্বেও খুজে পাইনা!
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের কোরআনের আয়াতে আলোকপাত করতে হবে। সুরা ক্বাহাফের ৯৬ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا
তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই। (সুরা ক্বাহাফ, আয়াত ৯৬)
এখানে বলা হয়েছে যে, দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে তাদেরকে এনে প্রথমে লোহার প্রাচীর দেয়া হয়। এরপর লোহার প্রাচীর এর উপর তামা গলিয়ে প্রলেপ দেয়া হয়। এরপর সেই গলিত তামা লোহার উপর মজবুত ভাবে গেঁথে গিয়ে শক্ত কাঠামো সৃষ্টি করে।

আমরা জানি, লোহার উপর বাতাস ও পানির বিক্রিয়ায় মরিচা উৎপন্ন হয়, যা একটি ভঙ্গুর পদার্থ। কিন্তু, তামার প্রলেপ থাকায় মরিচা ধরেনা। তামার অংশটির সাথে বিক্রিয়া ঘটে বাইরের পরিবেশ এর।
এক্ষেত্রে সংঘটিত বিক্রিয়াগুলো যদি আমরা ক্রমানুসারে দেখার চেষ্টা করি, তাহলে যা পাই:
আমরা জানি, তামা বা কপার ( Cu) , এটি বাতাসের বা বৃষ্টির পানির অক্সিজেন (O) এর সাথে বিক্রিয়া করে কপার অক্সাইড বা (CuO) উৎপন্ন করে।
Cu + O2 = CuO
এই CuO এর আকরিককে টেনোরাইট বলা হয়, যা মেরুন বর্ণের হয়ে থাকে। এখন বাতাসের মধ্যে থাকা সালফার পানির সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এসিড তৈরি করে। এই সালফিউরিক এসিড পুনরায় পানি ও কপার অক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়া করে ব্রকেনটাইট নামক পদার্থ সৃষ্টি করে, যা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে।
SO2 + H2O – H2SO4
H2SO4+ O2 + CuO – Cu4SO4(OH)6 (Brochantite)

এই ব্রকেনটাইট পুনরায় পানি ও সালফিউরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে Antlerite (Cu3(SO4)(OH)4) তৈরি করে, যা আরো গাঢ় সবুজ।

এত বেশি সবুজ হয়ে যাওয়ার কারণে, অসংখ্য গাছপালার সবুজ সমারোহ এর ভিড়ে ইয়াজুজ-মাজুজ এর সেই প্রাচীরটিকে স্যাটেলাইট বা অন্য কোন মাধ্যমে আমরা আলাদা করতে পারিনা। এই Antlerite এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার Statue of Liberty (স্ট্যাচু অব লিবার্টি) এর কথা বলতে পারি। এটি তামার প্রলেপ এর কারণে প্রথম দিকে এর রং যা ছিল, তার থেকে এখন পরিবর্তিত হয়ে সবুজাভ রং এ রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা আমাদের চিন্তাশক্তির দ্বারা ও বিজ্ঞানের সাহায্যে এই বিষয়গুলো বের করতে পারি।

কারণ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর তিনিই জমিনকে প্রশস্ত করেছেন এবং তাতে সুদৃঢ় পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন এবং সব রকমের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।” (সূরা আর-রাদ: আয়াত ৩)।
মহান রাব্বুন আলামিন, আমাদের চিন্তা করার তৌফীক দান করুন এবং আখেরি জামানার ইয়াজুজমাজুজের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন। / ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত