মসলা হিসেবে তেজপাতার বহুল ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু এর ভেষজ গুণ শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। ভেষজ গুণের কারণেই তেজপাতা ঘরোয়া চিকিৎসায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
অনেকেই জেনে অবাক হবেন, এই পাতা শরীরের ছোটখাটো কিছু সমস্যা সহজেই সারিয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তেজপাতায় থাকে ভিটামিন, মিনারেল এবং বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উপাদান, যা ব্যাকটেরিয়া নিধন করা, জ্বালাপোড়া কমানোসহ আরও অনেক উপকার করে।
তাহলে জেনে নিন কোন কোন রোগ তেজপাতা সহজেই সারাতে পারে।
ত্বকে ছত্রাকঘটিত সমস্যা দূর করে
ত্বক উন্নত করতে তেজপাতা উপকারী। এ ছাড়া এটি ত্বকের সংক্রমণ রোধে কার্যকর। ত্বকে নানা ধরনের ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ হয়। বিশেষ করে দাদের সমস্যা হয় অনেকেরই। তারা একটি করে তেজপাতা চার কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে, সেই পানিটি পান করতে পারেন। দিনে চার-পাঁচবার এই পানি পান করতে হবে। সপ্তাহ পাঁচেক এভাবে চললেই সুফল পাওয়া যায়। এমনকি ওই পানি দাদের ওপর লাগালেও লাভ হয়।
ব্রণের সমস্যা দূর করতে
একটি প্যানে ২ কাপ পানি ৫টি শুকনো তেজপাতা নিয়ে ঢেকে জ্বাল দিন। এরপর ঢাকনা খুলে ২ মিনিট জ্বাল দিয়ে একটি সসপ্যানে নামিয়ে নিন। একটি তোয়ালে দিয়ে মাথাসহ সসপ্যানটি ঢেকে ভাপ আপনার ত্বকে নিন। এভাবে মিনিট দশেক ভাপ নিলেই ব্রণ ও রিংকেল সমস্যা দূর হবে। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে দুবার করুন।
ফোঁড়ার সমস্যা দূর করে
ফোঁড়ার সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছেন? ফোঁড়া সারাতেও তেজপাতা অনেক কার্যকর। তেজপাতা বেটে ফোঁড়ার ওপর প্রলেপ দিন। ব্যথা কমবে। ফোঁড়া তাড়াতাড়ি শুকিয়েও যাবে।
কাশির সমস্যা সমাধান
তেজপাতায় থাকে বিভিন্ন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, যা শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। কাশি হলে বা জোরে কথা বললে অনেকের গলা ভেঙে যায়। তেজপাতা ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি পান করলে গলাব্যথা কমে যেতে পারে।
গয়ের দুর্গন্ধ দূর করে
গায়ে দুর্গন্ধ হচ্ছে? বা ত্বক শুষ্ক হয়ে গেছে? তেজপাতা বেটে নিয়ে চন্দনের প্রলেপের মতো লাগান। দুটি সমস্যাই কমবে।
প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে
শরীর শুকিয়ে গেছে? প্রস্রাবের রং হলুদ? দুই-তিন কাপ গরম পানিতে তেজপাতা দু’ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তার পরে ছেকে নিয়ে দুই-তিন ঘণ্টা অন্তর পানিটি পান করুন। সমস্যা কমবে।
ঘামের সমস্যা কমাবে
প্রচণ্ড ঘামেন? যারা বেশি ঘামেন তারা প্রতিদিন একবার করে তেজপাতা বাটা মেখে আধাঘণ্টা থাকার পর গোসল করে নিতে পারেন। এতে ঘামের মাত্রাটা কমে যাবে। আবার ঘামাচিরও উপশম হবে।
হজমশক্তি বাড়ায়
হজমশক্তি বাড়াতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তেজপাতায় রয়েছে এমন জৈব যৌগ, যা পেটের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যায় তেজপাতা খুব কার্যকর। অনেক সময় শরীর জটিল প্রোটিন সহজে হজম করতে পারে না, তেজপাতা তা হজমে সাহায্য করে।
চুলের বৃদ্ধি ও খুশকি তাড়ায়
খুশকি ও চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে বিপাকে আছেন? চুলের যত্নে তেজপাতায় রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কয়েকটি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন।
কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার এ পানি দিয়ে চুল ও স্কাল্প ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর এটি করবেন। মাথার ত্বক চুলকাচ্ছে? তেজপাতা বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মেশান। স্কাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে
কিছু গবেষণায় দেখা যায় তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
উদ্বিগ্নতা ও চাপ কমায়
যদি দিনের শেষে আপনার মনমেজাজ ভালো না লাগে তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি আপনার স্নায়ু শান্ত করে ও উদ্বিগ্নতা কমায় এমনকি ভালো ঘুমের জন্যেও উপকারী।
সতর্কতা
তেজপাতা গর্ভবতী মা ও সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটাতে পারে। এছাড়া সার্জারি রোগীদের দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয় কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।