অবচেতন মনে যে কাজটি প্রায় সকলেই করে থাকেন সেটা হল আঙুল ফোটানো। নার্ভাস বোধ করলেও অনেকে আঙুল ফোটান। পরিচিত এই অভ্যাসটিকে বিরক্তির চোখে দেখার পাশাপাশি ক্ষতিকর অভ্যাস হিসেবেও অভিহিত করেন অনেকে।
এই অভ্যাসটি সম্পর্কিত সবচেয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাটি হল, আঙুল ফোটালে আঙুলের জয়েন্ট বড় হয়ে যায় এবং এটা থেকে আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আসলেও কি তাই?
আঙুল ফোটানো হলে জয়েন্টের ভেতরের ফ্লুইড-ফিলড পকেটের ভেতরের চাপে পরিবর্তন আনা হয়। আমাদের আঙুলগুলো ছোট ছোট হাড়ের জয়েন্টে সম্পূর্ণ হয়। দুইটি হাড় একসাথে হওয়ার স্থানটিকে বলা হয় জয়েন্ট ক্যাপসুল। এই ক্যাপসুল ফ্লুইড দ্বারা পূর্ণ থাকে, যা দুইটি হাড়ের মাঝে সংঘর্ষ থেকে নিরাপদ রাখতে কাজ করে বলে জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অর্থোপেডিক্সের অর্থোপেডিক সার্জন জ্যাসন সোমজি, এমডি।
তিনি বলেন, ‘যখন আঙুল ফোটানো হয় তখন আঙুলের হাড়কে খুব সামান্য সরিয়ে আনা হয়, যা জয়েন্ট ক্যাপসুলের ভেতরের চাপে পরিবর্তন আনে। চাপের এই পরিবর্তনের ফলে গ্যাস বাবল তৈরি হয়, এতে করে আঙুল ফোটানোর সময় শব্দ শোনা যায়।’

তিনি আরও জানান, এ কারণে একই আঙুল পরপর দুইবার ফোটানো যায় না। কারণ ক্যাপসুলে গ্যাস বাবল তৈরি হওয়ার জন্য অন্তত ১৫ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।
জ্যাসন আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আঙুল ফোটানোর ফলে আঙুলের জয়েন্ট বড়ও হয় না এবং এই অভ্যাস থেকে আর্থ্রাইটিসের সমস্যাও হয় না। আঙুলের জয়েন্টের ক্যাপসুলের শর্ট টার্ম চাপের পরিবর্তন থেকে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয় না।‘
২০১১ সালের অভ্যাসগত আঙুল ফোটানোর উপর একটি গবেষণা থেকেও জানাচ্ছে, এই অভ্যাস থেকে অস্টোআর্থ্রাইটিসের সমস্যা দেখা দেওয়ার মাঝে কোন সম্পর্ক নেই।
অন্য একটি পরীক্ষামূলক গবেষণায় একজন হাড় বিশেষজ্ঞ ৬০ বছর ধরে শুধুমাত্র তার বাম হাতের আঙুল ফুটিয়েছেন এ বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝার জন্য তিনি দেখেছেন যে ডান হাত (যে হাতের আঙুল ফোটানো হয়নি) ও বাদ হাতের আঙুলের মাঝে দৃশ্যত ও কার্যত কোন পার্থক্য নেই।
তবে যে আঙুল ফোটানো থেকে কোন ব্যথাভাব দেখা দেয় না, সেটাকে বিপদহীন বলা হয়। অন্যদিকে যে আঙুল ফোটানো থেকে আঙুল ও জয়েন্টে ব্যথাভাবের উপদ্রব হয়, সেটা ক্ষতিকর হতে পারে বলে জানান অর্থোপেডিক সার্জন ড্যানিয়েল পল, এমডি।

তিনি বলেন, এমন আঙুল ফোটানোর ফলে অনেক সময়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই জোরে চাপ দিয়ে ও ব্যথাযুক্ত ভাবে আঙুল ফোটানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
এছাড়া আঙুল ফোটানোর অভ্যাস থাকুক আর না থাকুক, যদি হুট করে আঙুলের জয়েন্ট ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে বলে জানান ড্যানিয়েল।
যদিও আপনার আঙুল মটকানোর অভ্যাস সাথে সাথে আপনার ক্ষতি করছে না, তবে এটি আপনার চারপাশের লোকদের বিরক্ত করতে পারে। এটি অভ্যাস হয়ে গেলে আপনার এই বদভ্যাস থামানো কঠিন হতে পারে।
আঙুল মটকানোর অভ্যাস পরিত্যাগে কিছু টিপস
- আপনি কেন নিজের আঙুল ফোটানোর প্রয়োজন বোধ করলেন এবং এই কাজে আপনার কি উপকারে আসল, তা চিন্তা করুন।
- গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, অনুশীলন বা ধ্যানের মতো চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আরও একটি উপায় সন্ধান করুন।
- অন্যান্য স্ট্রেস রিলিভারগুলির সাথে নিজেকে পরিচিত করিয়ে দেন, আপনার হাতকে সেগুলোতে অভ্যস্ত করে তুলুন, যেমনঃ স্ট্রেস বল চেপে করা বা ফ্রিসবি (spinning Frisbee) বা স্পিনার (LED Spinner) নিয়ে ঘোরাতে পারেন।
- প্রতিবার আপনার আঙুল মটকানো সম্পর্কে সচেতন হন এবং সচেতনভাবে নিজেকে থামিয়ে দেন।
- আপনার কব্জিতে একটি রাবার ব্যান্ড পরিধান করুন এবং যখনই আপনি আপনার আঙুল মটকানোর চেষ্টা করতে যাবেন, তখন এটিকে আপনাকে থামিয়ে দিবে।